কৃষিকাজে বিজ্ঞান, কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞান প্রতিবেদন রচনা । Essay on Science in Agriculture

কৃষিকাজে বিজ্ঞান, কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞান [ Essay on Science in Agriculture ] অথবা, কৃষিকাজে বিজ্ঞান গুরুত্ব – নিয়ে একটি প্রতিবেদন রচনার নমুনা দেয়া হল।

কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা । Essay on Science in Agriculture
কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা । Essay on Science in Agriculture

কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনার ভূমিকা:

মানবজীবন প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল; সেই সঙ্গে পরিবর্তনশীল তার নির্মিত সভ্যতা। আজ থেকে একশ বছর আগে সভ্যতা কেমন ছিল আর বর্তমান সময়ে সভ্যতা কোন জায়গায় এসে পৌছেছে তা ভাবতেই অবাক লাগে। সভ্যতার এই ক্রম পরিবর্তনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে বিজ্ঞান।

বর্তমান বিশ্বে মানুষের এই যে অগ্রযাত্রা তা বিজ্ঞানের আবিষ্কারের ওপর ভিত্তি করেই রচিত হয়েছে। বিজ্ঞান মানুষকে গতিশীল করেছে এবং সভ্যতার অগ্রযাত্রাকে করেছে ত্বরান্বিত। প্রকৃতিকে শাসনের মতাে শক্তিশালী কর্মকাণ্ড মানুষ বিজ্ঞানের হাত ধরে সম্ভবপর করে তুলেছে। আর বর্তমানে কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূত্রও বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে ।

মানবসভ্যতা ও কৃষি:

মানুষের সভ্যতার ইতিহাস অত্যন্ত পুরােনাে। তবে সেই সভ্যতার প্রথম প্রতিষ্ঠা হয়েছিল কৃষির হাত
ধরে । মানুষ শিকারের বিকল্প হিসেবে কৃষিকে বেছে নিয়ে তার জীবনকে সুস্থির করেছিল। তাই এটি মানুষের আদিমতম জীবিকার একটি উপায়ও বটে।

সভ্যতার ইতিহাসকে পর্যালােচনা করে দেখা যায় যে কৃষিতে যে দেশ যত তাড়াতাড়ি অগ্রগতি সাধন করতে পেরেছে সে দেশ তত তাড়াতাড়ি সভ্যতার উপরের সিড়িকে অতিক্রম করেছে। এ থেকে আমরা উপলব্ধি করতে পারি যে, কৃষির উন্নতিতেই সমাজ, দেশ ও সভ্যতার ক্রমন্নোতি সম্ভব।

কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা । Essay on Science in Agriculture
কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা । Essay on Science in Agriculture

প্রাচীন যুগের কৃষি:

প্রাচীন যুগের পৃথিবী মানুষের জন্য খুব সুখকর ছিল না। পদে পদে তাদের জন্য বিপদ অপেক্ষা করত এবং ভয়াবহ সব বন্য জীবজন্তুর সঙ্গে তাদের লড়তে হতাে। এ অবস্থায় হঠাৎ তার হাতে কৃষিকাজের সূত্র আবিষ্কৃত হয়। প্রাথমিক অবস্থায় মানুষ নিজেই লাঙলের ভার বহন করত। কিন্তু তৎপরবর্তীকালে গরু, ঘােড়া ও মহিষের সাহায্যে জমি চাষের প্রচলন করেছিল।

কিন্তু প্রকৃতির কাছে মানুষ ছিল ভীষণ অসহায়। বন্যা, খরা, ঝড়, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টিতে ফসলের জমিতে কী করণীয় তা তারা জানত না। একই জমিতে একইভাবে তারা ফসল ফলানাের চেষ্টা করত; ফলে জমির উর্বরতা শক্তি কয়ে কাঙ্ক্ষিত ফসল হতাে না। এছাড়া বীজ সম্পর্কেও তাদের বিশদ কোনাে জ্ঞান ছিল না। তাই প্রাচীন কৃষির ইতিহাস খুব সুখকর ছিল না বলেই মনে হয়।

মধ্যযুগের কৃষি:

মধ্যযুগে মানুষ চাকা আবিষ্কার করে বহুদূর এগিয়ে যায়। এ আবিষ্কার কৃষিতেও ব্যাপক উন্নতি সাধন করে। সমগ্র পৃথিবীর পাশাপাশি ভারতীয় উপমহাদেশেও কৃষি মানুষের জীবিকার প্রধানতম বিষয় হয়ে দেখা দেয়। উন্নত ফসল ফলানাের জন্য মানুষ নানাবিধ পরিকল্পনা করতে থাকে। বনজঙ্গল কেটে নগর পত্তনের পাশাপাশি মানুষ কৃষি জমিও বৃদ্ধি করতে থাকে।

নদী তীরবর্তী অঞ্চলসমূহে পলিযুক্ত মাটিতে কৃষি কাজ করে ব্যাপক সাফল্য পায়। বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে যে মঙ্গলকাব্যসমূহ লেখা হয়েছে তাতে কৃষিকাজের নানারকম প্রয়ােগ ও উদ্ভাবন সম্পর্কে তথ্য দেয়া হয়েছে। সে সমস্ত তথ্য থেকে ধারণা করা যায় মধ্যযুগের পৃথিবীতে কৃষি তার প্রসার ভালােভাবেই শুরু করেছিল।

আধুনিক কালের কৃষি:

অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে এবং উনবিংশ শতাব্দীর গােড়ার দিকে বেঁনেসাস তথা শিল্পবিপ্লবের মাধ্যমে কৃষি বিস্তৃত উন্নতি সাধন করে। কৃষিক্ষেত্রে কৃষক উন্নত যন্ত্রপাতি, বীজ, সার প্রভৃতির সঙ্গে পরিচিত হয়। কাঠের লাঙলের পরিবর্তে যন্ত্র দ্বারা চাষ শুরু হয়। সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণের নানা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়। খরায় ফসল ফলানাের পদ্ধতি সম্পর্কে কৃষকরা অবগত হয়।

বিদ্যুৎচালিত পাম্পের সাহায্যে সেচ দেয়ার ফলে শুকনাে মাটিতেও সবুজ ফসল হেসে ওঠে। উন্নত বীজ, রাসায়নিক সার, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, মাটির পরীক্ষানিরীক্ষা করে কৃষক এখন মাটিতে ফসল ফলায়। ফলে বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় ব্যতিরেকে ফসল ফলানােতে তেমন কোনাে সমস্যায় পড়তে হয় না।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

উন্নত দেশের কৃষি:

বিজ্ঞানের অভিঘাতে ভর করে উন্নত দেশগুলােতে কৃষি কাজ পরিচালিত হচ্ছে। বীজবপন থেকে শুরু করে। ফসল ঘরে তােলা পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই তারা যন্ত্রের দ্বারস্থ হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের কৃষিযন্ত্র যেমন– মােয়ার (শস্য ছেদনকারী যন্ত্র), রপার (শস্য কাটার যন্ত্র), বাইন্ডার (শস্য বাধাই করার যন্ত্র), থ্রেশিং মেসিন (মাড়াই যন্ত্র), ম্যানিউর স্পেড়ার (সার বিস্তারণ যন্ত্র) উন্নত দেশের কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফিলিপাইন, চীন, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি করা সম্ভব হচ্ছে। জাপানের জমির উর্বরতা অনেক কম, কিন্তু তারা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষিক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে ।

বাংলাদেশের কৃষি:

বাংলাদেশের কৃষিতে আধুনিক বিজ্ঞানের ছোঁয়া খুব বেশিদিন আগে লাগেনি। এক দশক আগেও লাঙলের সাহায্যে এদেশের কৃষক হাল চাষ করত। এখনাে কিছু কিছু স্থানে এ দৃশ্য পরিলক্ষিত হবে। তবে এ কথা সত্যি যে মাঠের কৃষিতে বিজ্ঞানের খানিকটা শ্লথ গতি হলেও এদেশের গবেষণাগারে কৃষি সম্পর্কিত বিস্তর গবেষণা হচ্ছে। ইতােমধ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ ফল গবেষণা ইনস্টিটিউট বেশ কিছু উন্নতজাতের ফল ও ফসল উদ্ভাবন করেছে, যা মাঠ পর্যায়ে এসে বেশ সাফল্য পেয়েছে।

বিজ্ঞানসম্মত কৃষির বাস্তবিক গুরুত্ব:

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে কৃষির বাস্তবিক গুরুত্ব অনেকখানি। তবে পুরােনাে পদ্ধতির চাষাবাদে এখন আর সাফল্য লাভ করা সম্ভব নয়। এখন প্রয়ােজন অত্যাধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ। উন্নত বিশ্বের মতাে ছােটো জায়গায় অধিক ফসল ফলানাের কৌশল আমাদেরও আয়ত্ত করতে হবে। তবেই কৃষক ও কৃষির সমন্বিত সাফল্য
আসবে।

বৈজ্ঞানিক কৃষি ও অর্থনীতি:

বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষিকাজের ফলে অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন সাধিত হওয়া সম্ভব। অত্যন্ত আনন্দের বিষয় এই যে আমরা এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি। কিছু কিছু ফসল আমরা বাইরেও রপ্তানি করতে সমর্থ হচ্ছি। জীবন রহস্য আবিষ্কারের ফলে পাটের সােনালি দিন আবার আমাদের মধ্যে আসতে শুরু করেছে। বহু আগে থেকেই আমরা বিভিন্ন দেশে চা রপ্তানি করে থাকি। সুতরাং সর্বাধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক চাষাবাদের ফলে আমাদের পক্ষে এ সাফল্যকে আরও বড় পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।

কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা । Essay on Science in Agriculture
কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা । Essay on Science in Agriculture

উপসংহার:

আমাদের সবুজ ও শস্যসমৃদ্ধ এ দেশে কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানের জাদুর ছোঁয়ায় অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। বিজ্ঞানকে আমরা যত কাজে লাগাতে পারব ততই আমাদের কৃষিতে অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। তাই সরকারি ও বেসরকারি উভয় পর্যায় থেকেই বিজ্ঞানভিত্তিক চাষাবাদে কৃষককে উৎসাহিত ও সহযােগিতা করা আমাদের একান্ত কর্তব্য।

 

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment