[ADINSERTER AMP] [ADINSERTER AMP]

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রবর্তিত বাংলা বানানের নিয়ম

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রবর্তিত বাংলা বানানের নিয়ম | বাংলা একাডেমীর প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম | ভাষা ও শিক্ষা , বাংলা বানানের নিয়ম বেঁধে দেয়ার প্রথম দায়িত্ব পালন করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৩৫ সালে গঠিত বাংলা বানান সংস্কার কমিটির প্রতিবেদন ১৯৩৬ সালে প্রকাশিত হয়। সামান্য কিছু পরিবর্তনের পর ১৯৩৭ সালে বাংলা বানানের নিয়ম’ পুস্তিকার তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এই নিয়ম এখন সর্বত্র প্রচারিত এবং এর পরে প্রকাশিত সকল অভিধানে তা গৃহীত হয়েছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই নিয়ম বর্তমানে আধুনিক বাংলা বানানের নিয়ম হিসেবে পরিচিত। আমরা এখানে তাঁদের বানান বিষয়ক নিয়মসমূহ উদ্ধৃত করে দিচ্ছি :

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রবর্তিত বাংলা বানানের নিয়ম

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রবর্তিত বাংলা বানানের নিয়ম

সংস্কৃত বা তৎসম শব্দ :

১।  রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব

রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হইবে না, যথা- ‘অর্চনা, মূর্ছা, অর্জুন, কর্তা, কার্তিক, বার্তা, কর্দম, অর্ধ, বার্ধক্য, কর্ম, সর্ব’।

সংস্কৃত ব্যাকরণ-অনুসারে রেফের পর দ্বিত্ব বিকল্পে সিদ্ধ ; না করিলে দোষ হয় না, বরং লেখা ও ছাপা সহজ হয়।

২। সন্ধিতে ঙ-স্থানে অনুস্বার

যদি ক  খ  গ  ঘ  পরে থাকে তবে পদের অন্তস্থিত ম্ স্থানে অনুস্বার অথবা বিকল্পে ঙ বিধেয়, যথা- “অহংকার, ভয়ংকর, সংখ্যা, সংগম, হৃদয়ংগম, সংঘটন’ অথবা ‘অহঙ্কার, ভয়ঙ্কর’ ইত্যাদি।

সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়ম অনুসারে বর্গীয় বর্ণ পরে থাকিলে পদের অন্তস্থিত ম্ স্থানে অনুস্বার বা পরবর্তী বর্গের পঞ্চম বর্ণ হয়। বাংলায় সর্বত্র এই নিয়ম অনুসারে ং দিলে উচ্চারণে বাধিতে পারে, কিন্তু ক-বর্গের পূর্বে অনুস্বার ব্যবহার করিলে বাধিবে না, বরং বানান সহজ হইবে।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

অ-সংস্কৃত অর্থাৎ তদ্ভব, দেশজ ও বিদেশী শব্দ :

৩। রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব

রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হইবে না, যথা- কর্জ, শর্ত, পর্দা, সর্দার, চর্বি, ফর্মা, জার্মানি’।

৪। হস্-চিহ্ন

শব্দের শেষে সাধারণত হস্-চিহ্ন দেওয়া হইবে না, যথা- “ওস্তাদ, কংগ্রেস, চেক, জজ, টন, টি-পট, ট্রাম, ডিশ, তছনছ, পকেট, মক্তব, হুক, করিলেন, করিস। কিন্তু যদি ভুল উচ্চারণের সম্ভাবনা থাকে তবে হস্-চিহ্ন বিধেয়। হ এবং ও যুক্তব্যঞ্জনের উচ্চারণ সাধারণত স্বরান্ত, যথা— দহ, অহরহ,কান্ড। যদি হসন্ত উচ্চারণ অভিষ্ট হয় তবে হ ও যুক্ত ব্যঞ্জনের পর হস-চিহ্ন আবশ্যক, যথা- শাহ্,  জেমস, বন্ড।

কিন্তু সুপ্রচলিত শব্দে না নিলে চলিবে, যথা— ‘আর্ট, কর্ক, গভর্নমেন্ট, স্পঞ্জ। মধ্য বর্ণে প্রয়োজন হইলে হস-চিহ্ন বিধেয়, যথা—— ‘উলকি, সটকা’। যদি উপান্তা স্বর অত্যন্ত হ্রস্ব হয় তবে শেষে হস-চিহ্ন বিধেয়, যথা– কটকট, খপ, সার।

বাংলায় কতকগুলি শব্দের শেষে অ-কার উচ্চারিত হয়, যথা- ‘গলিত, মন, দৃঢ়, প্রিয়, করিয়াছ, করিত, ছিল, এস’। কিন্তু অধিকাংশ শব্দের শেষের অ-কার গ্রস্ত অর্থাৎ শেষ অক্ষর হসন্তবৎ, যথা “অচল, গভীর, পাঠ করুক, করিস, করিলেন’। এই প্রকার সুপরিচিত শব্দের শেষে অ-ধ্বনি হইবে কি হইবে না তাহা বুঝাইবার জন্য কেহই চিহ্ন প্রযোগ করেন না।

অধিকাংশ স্থলে অ-সংস্কৃত শব্দে অন্ত্য হস-চিহ্ন অনাবশ্যক, বাংলাভাষার প্রকৃতি অনুসারেই হসন্ত উচ্চারণ হইবে। অল্প কয়েকটি বিদেশী শব্দের শেষে অ উচ্চারণ হয়, যথা- “বাই-ল”। কিন্তু প্রভেদ রক্ষার জন্য অপর বহু বহু শব্দে হস্র-চিহ্নের  ভার চাপান অনাবশ্যক। কেবল ভুল উচ্চারণের সম্ভাবনা থাকিলে হস-চিহ্ন বিধেয়।

৫। ই ঈ উ ঊ

যদি মূল সংস্কৃত শব্দে ঈ বা ঊ থাকে তবে তদ্ভব বা তৎসদৃশ শব্দে ঈ বা ঊ অথবা বিকল্পে ই বা উ হইবে, যথা— ‘কুমীর, পাখী, বাড়ী, শীর্ষ, উনিশ, চুন, পূব’ অথবা ‘কুমির, পাখি, বাড়ি, শিব, উনিশ, চুন, পুব’। কিন্তু কতকগুলি শব্দে কেবল ঈ, কেবল ই অথবা কেবল উ হইবে, যথা— নীলা (নীলক), হীরা (হীরক), দিয়াশলাই (দীপশলাকা), পানি (পানীয়),  চুল (চূল ), জুয়া (দ্যুত)।

স্ত্রীলিঙ্গ এবং জাতি, ব্যক্তি, ভাষা ও বিশেষণবাচক শব্দের অন্তে ঈ হইবে, যথা— ‘কলুনী, বাঘিনী, কাবুলী, কেরানী, ঢাকী, ফরিয়াদী, ইংরেজী, বিদাতী, দাগী, রেশমী’। কিন্তু কতকগুলো শব্দে ই হইবে, যথা— ‘ঝি, দিদি, বিবি, কচি, মিহি, মাঝারি, চলতি। “পিসী, মাসী’ স্থানে বিকল্পে ‘পিসি, মাসি’ লেখা চলিবে।

অন্যত্র মনুষ্যেতর জীব, বস্তু, গুণ, ভাব ও কর্মবাচক শব্দের এবং দ্বিরাবৃত্ত শব্দের অন্তে কেবল ই হইবে, যথা- বেঙাচি, বেজি, কাঠি, সুজি, কেরামতি, চুরি, পাগলামি, বাবুগিরি, তাড়াতাড়ি সরাসরি, সোজাসুজি।

নবাগত বিদেশী শব্দে ঈ ঊ প্রয়োগ সম্বন্ধে পরে দ্রষ্টব্য ।

৬। জ য :

এই সকল শব্দে য না লিখিয়া জ লেখা বিধেয়, যথা— কাজ, জাউ, জাঁতা, জাতি, জুই, জুত, জো, জোড়, জোড়া, জোত, জোয়াল।

৭। ণ ন:

অ-সংস্কৃত শব্দে কেবল ন হইবে, যথা— কান, সোনা, বামুন, কোরান, করোনার’। কিন্তু যুক্তাক্ষর ট, ণ্ঠ, চলিবে, যথা— ‘ঘুণ্টি, লুণ্ঠন, ঠাণ্ডা।

“রানী’ স্থানে বিকল্পে ‘রাণী’ চলিতে পারিবে।

৮। ও-কার, ঊর্ধ্ব-কমা প্রভৃতি:

সুপ্রচলিত শব্দের উচ্চারণ, উৎপত্তি বা অর্থের ভেদ বুঝাইবার জন্য অতিরিক্ত ও-কার, ঊর্ধ্ব কমা বা অন্য চিহ্ন যোগ যথাসম্ভব বর্জনীয়। যদি অর্থগ্রহণে বাধা হয় তবে কয়েকটি শব্দে অন্ত্য অক্ষরে ও-কার এবং আদ্য বা মধ্য অক্ষরে ঊর্ধ্ব কমা বিকল্পে নেওয়া যাইতে পারে, যথা- ‘কাল, কালো, ভাল, ভাগো, মত, মতো, পড়ো, প’ড়ো (পড়ুয়া বা পতিত)।

এই সকল বানান বিধেয়- এত, কত যত, তত, বৌ, হয়তো, কাল (সময়, কল্য), চাল (চাউল, ছাত, গতি), ভাল (দাইল, শাখা)।

৯। ং ঙ:

“বাঙ্গলা, বাঙ্গালা, বাঙ্গালী, ভাঙ্গন’ প্রভৃতি ‘বাংলা, বাংলা, বাঙালী, ভাঙন’ প্রভৃতি উভয় প্রকার বানানই চলিবে। ং ঙ-র প্রাচীন উচ্চারণ যাহাই হউক, আধুনিক বাংলা উচ্চারণ সমান, সেজন্য অনুষার স্থানে বিকল্পে ও লিখিলে আপত্তির কারণ নাই। রং-এর অপেক্ষা ‘রঙের’ লেখা সহজ।  ‘রঙের’ লিখলে অভীষ্ট উচ্চারণ আসিবে না, কারণ ‘রঙ্গ’ ও ‘রং-এর উচ্চারণ সমান নয়, কিন্তু ‘রং’ ও ‘রঙ’ সমান।

১০। শ ষ স :

মূল সংস্কৃত শব্দ অনুসারে তন্তর শব্দে শ ব বা স হইবে, যথা— আঁশ (অংশ), আঁষ (আমির), শাস (শস্য), মশা (মশক), পিসী (পিতৃৰসা। কিন্তু কতকগুলি শব্দে বাতিক্রম হইবে, যথা : মিনসে (মনুষ্য), সাধ” (শ্রদ্ধা)। বিদেশী শব্দে মূল উচ্চারণ-অনুসারেও এ স্থানে স, sh স্থানে শ হইবে। যথা – আসন, ক্লাস, খাস, জিনিস, পুলিস, পেনসিল, মসলা, মাসুল, সবুজ, সাদা সিমেন্ট, খুশি, চশমা, তক্তাপোশ, পশম, পোশাক, পালিশ, পেনশন, শখ, শৌখিন, শয়তান, শরবত, শরম, শহর, শার্ট, শেকস্পিয়র’। কিন্তু কতকগুলি শব্দে বাতিক্রম হইবে, যথা— “ইস্তাহার (ইশতিহার), গোমস্তা (গুমাতাহ্), ভিস্তি (বিহিশতী), খ্রীস্ট, খ্রিষ্ট (Christ) |

শ ষ স এই তিন বর্ণের একটি বা দুইটি বর্জন করিলে বাংলা উচ্চারণে বাধা হয় না, বরং বানান সরল হয়। কিন্তু অধিকাংশ তদ্‌ভব শব্দে মূল অনুসারে শ য স প্রয়োগ বহুপ্রচলিত এবং একই শব্দের বিভিন্ন বানান প্রায় দেখা যায় না।

এই রীতির সহসা পরিবর্তন বাঞ্ছনীয় নয়। বহু বিদেশী শব্দের প্রচলিত বাংলা বানানে মূল অনুসারে শত বা স লেখা হয়, কিন্তু কতগুলো শব্দে ব্যতিক্রম বা বিভিন্ন বানান দেখা যায়, যথা- সরবত, শরবত, নরম, শরম, শহর, সহর, শয়তান, সয়তান, পুলিস, পুলিশ সামঞ্জস্যের জন্য যথাসম্ভব একই নিয়ম গ্রহণীয়। বিদেশী শব্দের S-ধ্বনির জন্যে বাংলায় ছ অক্ষর বর্জনীয়। কিন্তু যেখানে প্রচলিত বাংলা বানানেই আছে এবং উচ্চারণেও ছ হয়, সেখানে প্রচলিত বানানই বজায় থাকিবে, যথা— ‘কেচ্ছা, ছয়লাপ, তছনছ, পছন্দ’।

দেশজ বা অজ্ঞাতমূল শব্দের প্রচলিত বানান হইবে, যথা— ‘করিস, ফরসা (ফরশা) সরেস (সরেশ)”।

১১। ক্রিয়াপদ:

সাধু ও চলিত প্রয়োগে কৃদন্ত রূপে করান, পাঠান প্রভৃতি অথবা বিকল্প করানো, পাঠানো প্রভৃতি বিধেয়। চলিত ভাষার ক্রিয়াপদের বিহিত বানানের কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হইল। বিকল্পে ঊর্ধ্বকমা বর্জন করা যাইতে পারে এবং নাম বিভক্তি স্থানে লুম বা লেম লেখা যাইতে পারে।

হ-ধাতু:

হয় হন, হও, হস, হই। হচ্ছে। হয়েছে। হ ‘লাম। হত। হচ্ছিল। হয়েছিল। হব (হবো), হবে। হরো, হ’স হতে, হবে, হলে, হবার, হওয়া।

খা-ধাতু:

খায়, খান, খাও, খাস, খাই। খাচ্ছে। খেয়েছে। খাক, খান, যাও, যা খেলে, খেলাম। খেত। খাচ্ছিল। খেয়েছিল। খাব (খাবো), খাবে। খেয়ো, খাস। খেতে খেয়ে, খেলে, খাবার, খাওয়া।

দি-ধাতু:

দেয়, দেন, দাও, দিস, দিই। দিচ্ছে। দিয়েছে। দিক, দিন, দাও, দে। দিলে, দিলাম। নিত। দিচ্ছিল। দিয়েছিল। দেব (দেবো), দেবে। দিও, দিস। দিতে, দিয়ে, দিলে, দেবার, দেওয়া।

শু-ধাতু:

শোয়, শোন, শোও, শুস, শুই। শুচ্ছে। শুয়েছে। শুক, শুন, শোষ, শো। শুন, শুলাম। শুত। শুচ্ছিল। শুয়েছিল। শোব (শোবো)। শুয়ো, শুস। শুতে, শুয়ে, শুলে, শোবার, শোয়া।

কর্-ধাতু:

করে, করেন, কর, করিস, করি। করছে। করেছে। করুক, করুন, কর, কর। করলে, করলাম। করত। করছিল। করেছিল। ক’রব করবো), ক’রবে। কারো, করিস করতে করে, করলে, করবার, করা।

কাট্-ধাতু:

কার্টে, কার্টেন, কার্ট, কাটিস, কাটি। কাটছে। কেটেছে। কাটুক, কার্টুন, কার্ট, কাট। কাটলে, কাটলাম। কাটত। কাটছিল। কেটেছিল। কাটব (কাটবো), কাটবে। কেটো, কাটিস। কাটতে, কেটে, কাটলে, কাটবার, কাটা।

লিখ্-ধাতু:

লেখে, লেখেন, লেখ, লিখিস, লিখি লিখছে লিখেছে। লিখুক, লিখুন, লেখ, লেখ। লিখলে লিখगाম লিখত। লিখছিল। লিখেছিল। লিখব (লিখবো লিখবে। লিখো, লিবিস। লিখতে লিখে লিখলে লেবার লেখা।

উঠ্-ধাতু:

ওঠে ওঠেন, ওঠ, উঠি উঠি। উঠেছে। উঠুক, উঠুন, ওঠ, ওঠ। উঠল উঠলাম। উঠত। উঠছিল। উঠেছিল। উঠব (উঠবো), উঠবে। উঠো উঠিল। উঠতে উঠে উঠলে ওঠবার ওঠা।

করা-ধাতু:

করায়, করান, করাও, করাস করাই। করাচ্ছে। করিয়েছে। করাক করান, করাও, করা। করালে, করালাম। করাত। করাচ্ছিল। করিয়েছিল। করার করাবো। করাবে। করিও, ক্যাস। করাতে, করিয়ে, করণে করবার, করন করানো)।

১২। কতকগুলি সাধুশব্দের চলিত রূপ:

‘কুয়া, সুতা, মিছা, উঠান, উনান, পুরান, পিছন, পিতল, ভিতর, উপর’ প্রভৃতি কতকগুলি সাধুশব্দের মৌখিক রূপ কলিকাতা অঞ্চলে অন্যপ্রকার। যে শব্দের মৌখিক বিকৃতি আদা অক্ষরে তাহার সাধুরূপই চলিত ভাষায় গ্রহণীয়, যথা— ‘পিছন, পিতল, ভিতর, উপর”। যাহার বিকৃতি মধ্য বা শেষ অক্ষরে তাহার চলিত রূপ মৌখিক রূপের অনুযায়ী করা বিধেয়, যথা— ‘কুয়ো সুতো, মিছে, উঠন, উনন, পুরনো’।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রবর্তিত বাংলা বানানের নিয়ম | বাংলা একাডেমীর প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম | ভাষা ও শিক্ষা

 

নবাগত ইংরেজী ও অন্যান্য বিদেশী শব্দ

Cut এর u, cat এর a, f, v, w, z প্রকৃতির প্রতিবর্ণ বাংলায় নাই। অল্প কয়েকটি নূতন অক্ষর বা চিহ্ন বাংলা লিপিতে প্রবর্তিত করিলে মোটামুটি কাজ চলিতে পারে। বিদেশী শব্দের বাংলা বানান যথাসম্ভব উচ্চারণসূচক হওয়া উচিত’ কিন্তু নূতন অক্ষর বা চিহ্নের বাহুল্য বর্জনীয়। এক ভাষার উচ্চারণ অন্য ভাষার লিপিতে যথাযথ প্রকাশ করা অসম্ভব। নবাগত বিদেশী শব্দের শুদ্ধি রক্ষার জন্য অধিক আয়াসের প্রয়োজন নাই, কাছাকাছি বাংলা রূপ হইলেই লেখার কাজ চলিবে। যে সকল বিদেশী শব্দের বিকৃত উচ্চারণ ও তদনুযায়ী বানান বাংলায় চলিয়া গিয়াছে। সে সকল শব্দের প্রচলিত বানানই বজায় থাকিবে, যথা— কলেজ, টেবিল, বাইসিকেল, সেকেন্ড।

১৩। বিবৃত অ (cut-এর u)

মূল শব্দে যদি বিধৃত অ থাকে তবে বাংলা বানানে আদ্য অক্ষরে আকার এবং মধ্য অক্ষরে অ-কার বিশেষ যথা—ক্লাব (club), বাস্ (bus), বাল্‌ব (bulb), সার (sir), থার্ড (third) বাজেট (budget), জার্মান (German ) কাটলেট (cutlet), সার্কস (circus), ফোকাস (focus)।

১৪। বক্র আ (বা বিকৃত এ। cat এর a)

মূল শব্দে বক্র আ থাকিলে বাংলায় আদিতে ‘অ্যা’ এবং মধ্যে না বিধেয়, যথা— ‘অ্যাসিড (acid), হ্যাট (hat)”।

এইরূপ বানানে ‘পা’-কে য-ফলা+আ-কার মনে না করিয়া একটি বিশেষ স্বরবর্ণের চিহ্ন জ্ঞান করা যাইতে পারে, যেমন হিন্দীতে এই উদ্দেশ্যে ঐ-কার চলিতেছে (hat )। নাগরী লিপিতে যেমন অ-অক্ষরে ও-কার যোগ করিয়া ) হয়, সেইরূপ বাংলায় অ্যা হইতে পারে।

১৫। ঈ ঊ :

মূল শব্দের উচ্চারণে যদি ই ঊ থাকে তবে বাংলা বানানে ঈ ঊ বিধেয়, যেথা— সীল (seal), ইস্ট (east), উস্টার (Worcester)।

১৬। f v : 

f v  স্থানে যথাক্রমে ফ ভ বিধেয়, যথা-‘ফুট (foot) ভোট (vote)’। যদি মূল শব্দে -এর উচ্চারণ । তুল্য হয়, তবে বাংলা বানানে ফ হইবে। যথা— ‘ফন (von)”।

১৭। W :

w স্থানে প্রচলিত রীতি অনুসারে বা বিষেয় দেখা উইসন (Wilson), উড (wood), ওয়ে (way)।

১৮। য় : 

নবাগত বিদেশী শব্দে অনর্থক য় প্রয়োগ বর্জনীয়। মেয়র, চেয়ার, রেডিয়ম, সোয়েটর’ প্রভৃতি বানান চলিতে পারে, কারণ ‘অ’ লিখিলেও উচ্চারণ বিকৃত হয় না। কিন্তু উ-কার বা ও-কারের পর অকারণে য়, যা, য়ো লেখা অনুচিত। ‘এডোয়ার্ড, তয়ার বন্ড’ না লিখিয়া র্ড, ওপর-বন্ড দেউতি ( hardware) বানানে দোষ নাই।

১৯। s sh :

১০ সংখ্যক নিয়ম দ্রষ্টব্য।

২০। st :

নবাগত বিদেশী শব্দে st স্থানে নূতন সংযুক্ত বর্ণ স্ট বিধেয়। যেমন— ‘স্টোভ (stove)’)।

২১। Z :

z স্থানে জ বা জ্ বিধেয়।

২২। হস্-চিহ্ন :

৪ সংখ্যক নিয়ম দ্রষ্টব্য।

 

বাংলা একাডেমি ১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলা বানানকে নিয়মিত, অভিন্ন ও প্রমিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করে একটি নিয়ম দাঁড় করিয়েছিলেন। যার পরিমার্জিত ও সংশোধিত সংস্করণ তাঁরা ১৯৯৪-এর জানুয়ারিতে প্রকাশ করেন। তাদের সেই ‘প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম পুস্তিকায়া বলেছেন, এখন থেকে বাংলা একাডেমি তার সকল কাজে, তার বই ও পত্রপত্রিকায় এই বানান ব্যবহার করবে। ভাষা ও সাহিত্যের জাতীয় প্রতিষ্ঠানরূপে বাংলা একাডেমি সংশ্লিষ্ট সকলকে— লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী এবং বিশেষভাবে সংবাদপত্রগুলোকে, সরকারি ও বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানকে— এই বানান ব্যবহারের সুপারিশ ও অনুরোধ করছে।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রবর্তিত বাংলা বানানের নিয়ম | বাংলা একাডেমীর প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম | ভাষা ও শিক্ষা

 

আরও দেখুন:

Leave a Comment