করোনা ভাইরাস, করোনাভাইরাস রোগ প্রতিবেদন রচনা। Essay on Corona Virus

করোনা ভাইরাস,  করোনাভাইরাস রোগ [ Essay on Corona Virus ]  অথবা, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ – নিয়ে একটি প্রতিবেদন রচনার নমুনা দেয়া হল।

 

করোনা ভাইরাস রচনা । Essay on Corona Virus । প্রতিবেদন রচনা
করোনা ভাইরাস রচনা । Essay on Corona Virus । প্রতিবেদন রচনা

করোনা ভাইরাসের প্রতিবেদনের ভূমিকা :

সৃষ্টির আদি লগ্ন থেকে মানুষ নিজের প্রখর বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে উন্নত থেকে উন্নততর সভ্যতার পথে অগ্রসর হয়েছে। কালের নিয়মে জন্ম নিয়েছে আধুনিক বিজ্ঞান, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি; জীবন লাভ করেছে এক অনন্য মাত্রা। সভ্যতার জয়যাত্রার পথে মানুষ আজ ভূগর্ভ থেকে মহাকাশ পর্যন্ত পাড়ি দিয়েছে।

কিন্তু পাশাপাশি একথাও সত্য যে পৃথিবীর বুকে সভ্যতা যতই জাঁকিয়ে বসেছে, ততই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মানুষের জীবনের নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ। ভিন্ন ভিন্ন যুগে জীবনের এই প্রতিকূলতার রূপও ভিন্ন ভিন্ন।

কখনো আঘাত আসে ভূমিকম্প, বন্যা বা খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ রূপে; কখনো বা পৃথিবীর বুকে কোন মহাজাগতিক বস্তু আছড়ে পড়ার আশঙ্কায় মানুষ ভোগে অস্তিত্ব সংকটে; আবার কখনো সভ্যতার মৃত্যুর পদধ্বনি শোনা যায় কোন মারণরোগ কিংবা মহামারীর আগমনে। বিশ্বব্যাপী প্রাণসংহারী এই মহামারীর তালিকায় নবতম সংযোজন আমাদের প্রবন্ধের মূল আলোচ্য করোনা ভাইরাস।

মহামারী কি ?

মানব সভ্যতার মতো পৃথিবীতে মহামারীরও এক দীর্ঘ ইতিহাস আছে। করোনা ভাইরাস কে জানতে বা বুঝতে গেলে সর্বপ্রথম মহামারী সম্বন্ধে অবগত হওয়া প্রয়োজন।

স্বাভাবিকভাবে প্রথমেই প্রশ্ন আসে, আসলে কি এই মহামারী? কোন একটি রোগের জীবাণু যখন কোন কারনে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে তখন তাকে বলে স্থানীয় সংক্রামক ব্যাধি বা ইংরেজি ভাষায় endemic. সেই জীবাণুই যখন একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের গন্ডি পেরিয়ে একটি বৃহৎ অঞ্চল জুড়ে বিস্তার লাভ করে এবং সংক্রমনের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, তখন তা একটি মহামারী বা epidemic রূপে আখ্যায়িত হয়।

করোনা ভাইরাস রচনা । Essay on Corona Virus । প্রতিবেদন রচনা
করোনা ভাইরাস রচনা । Essay on Corona Virus । প্রতিবেদন রচনা

আবার সেই রোগই যখন দেশ বা মহাদেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে তখন তা বিশ্বমহামারী, অতিমারী কিংবা pandemic নামে পরিচিতি লাভ করে। প্রতিটি মহামারীর সংক্রমণের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ চরিত্র বা ধরন থাকে।

কোন ক্ষেত্রে মহামারী ছড়ায় প্রতিদিনের ব্যবহৃত জল থেকে, কোন ক্ষেত্রে কোন রোগবহনকারী জীব থেকে, কখনো বা কোন ধরনের ছত্রাক থেকে; আবার কখনো মানুষ থেকে মানুষে সরাসরি।

ইতিহাসে মহামারী :

বিশ্বজুড়ে মহামারীর এই ইতিহাস অত্যন্ত নির্মম এবং বেদনাদায়ক। কখনো মহামারী এসেছে কলেরা রূপে, কখনো বা নেমে এসেছে ভয়ানক কৃষ্ণমৃত্যু বা প্লেগের অভিশাপ, কখনো জিকা ভাইরাস, কখনো ইবোলা, আবার কখনো এসেছে স্প্যানিশ ফ্লু। আর এই তালিকায় সর্বাধুনিক সংযোজন করোনা ভাইরাস।

ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে, পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন স্থানে নানাধরনের মহামারী হানা দিয়ে প্রাণ কেড়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষের। সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে জনসংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় এই মহামারীর প্রকোপ আরো তীব্রভাবে অনুভূত হবার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে।

করোনা ভাইরাসের উৎস :

করোনাভাইরাস এর উৎস সম্পর্কে পৃথিবীজুড়ে আজও সমূহ বিতর্ক বিদ্যমান। কারোর মতে এই ভাইরাস কৃত্রিম উপায়ে গবেষণাগারে তৈরি; আবার কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মনে করেন এই ভাইরাসের উৎস হলো বাদুড়। তবে কোন মহলই এই ব্যাপারে ঐক্যমতে পৌঁছতে পারেননি।

যে একটি ব্যাপারে মোটামুটি সকলেই নিশ্চিত তা হল এই ভাইরাসের গ্রাউন্ড জিরো। অর্থাৎ এর সংক্রমণ সর্বপ্রথম কোথা থেকে শুরু হয়েছিল। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার বক্তব্য অনুযায়ী এই ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয় চীন দেশের হুনান প্রদেশের রাজধানী উহান শহরের একটি মাংসের বাজার থেকে। সেখান থেকেই এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ে এক বিশ্ব মহামারী আকার ধারণ করে।

করোনা ভাইরাসের নামকরণ :

প্রথমেই বলে রাখা দরকার যে “করোনা” এবং “ভাইরাস” দুটি শব্দই লাতিন ভাষা থেকে গৃহীত। “করোনা” শব্দের অর্থ মুকুট বা crown এবং “ভাইরাস” বলতে বোঝায় একপ্রকার অকোষীয় আণুবীক্ষণিক রোগ সৃষ্টিকারী বীজাণুকে যার আক্ষরিক অর্থ হল ‘বিষ’।

ভাইরাস জীবগোষ্ঠীর অন্তর্গত নাকি জড়, সে ব্যাপারে বিজ্ঞানীদের মধ্যে বিস্তর মতপার্থক্য আছে। তাই ভাইরাসকে একটি রোগ বহনকারী বীজাণু রূপে ধরে নেওয়াই বাঞ্ছনীয়।অন্যদিকে, আমাদের আলোচ্য ভাইরাসটির নাম করোনা হওয়ার কারণ হল এর আকৃতি।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ এ পর্যবেক্ষিত এই ভাইরাসটির শরীরজুড়ে খাজকাটা অসংখ্য কন্টক একে আপাতভাবে একটি রাজমুকুটের আকার দেয়। এই ভাইরাসটি ভাইরাসগোষ্ঠীর অন্যান্য সদস্যদের তুলনায় আয়তনে বেশ খানিকটা বড়। এটি ডায়ামিটারে ০.০৬ মাইক্রন থেকে ০.১৪ মাইক্রন বা গড়ে ০.১২৫ মাইক্রন পর্যন্ত হয়ে থাকে।

করোনা ভাইরাসের চরিত্র বিশ্লেষণ :

আজকের করোনা ভাইরাসের প্রকৃত রূপ সম্পর্কে জানার জন্য এর চরিত্রের চুলচেরা বিশ্লেষণ একান্ত প্রয়োজনীয়। করোনাভাইরাস এই পৃথিবীর রোগের দুনিয়ায় নতুন নয়। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে প্রথম মানুষের শরীরে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব চিহ্নিত হয়। তারপর থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত মানুষের শরীরে রোগ বহনকারী প্রায় পাঁচ প্রকারের করোনাভাইরাস আবিষ্কৃত হয়।

এই ভাইরাস মানুষের শরীরে বাসা বেঁধে মূলত শ্বাস-প্রশ্বাসের ক্ষেত্রে বিশেষ জটিলতার উদ্রেক ঘটায়। কিন্তু যে করোনাভাইরাস নিয়ে আমাদের মূল আলোচনা, তা পুরনো করোনাভাইরাস থেকে বহুলাংশে পৃথক এবং সম্পূর্ণ নতুন প্রকৃতির। যার ফলে প্রথম থেকেই একে চিহ্নিত করা হচ্ছে নোভেল করোনাভাইরাস নামে। ২০১৯ সালের শেষ দিক থেকে চীনে এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা যায়।

মিউকাস এর মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে এই ভাইরাসটি বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আক্রমণ করে। এক্ষেত্রেও প্রধান লক্ষ্য হয়ে থাকে মানুষের শ্বাসযন্ত্র। অত্যন্ত ছোঁয়াচে এই ভাইরাসটি প্রধানত মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ে সংক্রমণ ঘটায়। নোভেল করোনা ভাইরাস ঘটিত রোগটিকে বিশেষজ্ঞরা চিহ্নিত করেছেন কোভিড-১৯ নামে। যার পুরো কথা হল Corona VIrus Disease 19 (COVID-19).

 

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ :

বিশ্বব্যাপী এই ভাইরাসটির সংক্রমণের কারণ সংক্রান্ত ব্যাপারে আর বিস্তারিত আলোচনার অবকাশ আছে বলে মনে হয় না। কি কি ভাবে এই ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়তে পারে সে ব্যাপারে বড় বড় চিকিৎসক থেকে শুরু করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অব্দি কেউই এখনো সম্পূর্ণ নিশ্চিত হতে পারেননি। তবে এই ভাইরাসটির সংক্রমণ বিশেষজ্ঞদের মতে চারটি পর্যায়ে বিভক্ত।

প্রথমটি হল, এমন ধরনের মানুষ যারা বিশেষভাবে সংক্রমিত অঞ্চল থেকে সরাসরি সংক্রমিত হয়ে এসেছে। দ্বিতীয় পর্যায়টি হল, যেখানে সরাসরিভাবে সংক্রমিত হওয়া সেই সব মানুষ গুলি নিজেদের সংস্পর্শে আসা অন্যান্য মানুষদের শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটায়। তৃতীয় পর্যায়ে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে এক বৃহত্তর অঞ্চল জুড়ে।

এই পর্যায়ে সংক্রমিত ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শে না আসা ব্যক্তিও তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকে সংক্রমিত হয়। এটি গোষ্ঠী সংক্রমনের পর্যায় হিসেবে পরিচিত। চতুর্থ বা অন্তিম পর্যায়ে সংক্রমণ রাজ্য কিংবা দেশজুড়ে এক মহামারীর আকার ধারণ করে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এই চতুর্থ পর্যায়ে পৌঁছে গেলে ভ্যাকসিন ছাড়া তাকে রোধ করা এক প্রকার অসম্ভব হয়ে পড়ে।

 

করোনা ভাইরাস চিকিৎসা :

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হবার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা চিহ্নিত করেছেন মানুষের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার অভাবকে। এতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে গলা ব্যথা, জ্বর কিংবা শ্বাসকষ্টের মতন উপসর্গগুলি লক্ষ্য করা যেতে পারে। ভাইরাস ঘটিত এই রোগটির নির্দিষ্ট চিকিৎসা বলে এখনো অবধি কোন কিছুকে চিহ্নিত করা যায়নি।

আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে উদ্রেক হওয়া জটিলতার উপসর্গ অনুসারে ওষুধ প্রয়োগ করে রোগীর শরীরকে এক্ষেত্রে বাইরে থেকে প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা দেওয়া হয়। শরীর এই প্রতিরোধমূলক চিকিৎসার দ্বারা নিজেই নিজের ভিতর ধীরে ধীরে ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি গড়ে তোলে।

এই প্রক্রিয়া চলাকালীন রোগীকে সম্পূর্ণভাবে আইসোলেশনে বা অন্তরীণ অবস্থায় থাকতে হয়। যদিও সম্প্রতি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে যেতে পারে।

 

করোনা ভাইরাসের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা :

ইতিপূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে কোভিড-১৯ এর নির্দিষ্ট চিকিৎসা বলে কোন কিছু নেই। উপসর্গ অনুযায়ী এর চিকিৎসা হয়ে থাকে। তাই এই ভাইরাস থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হল ভ্যাক্সিনেশন বা টিকাকরণ এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ। বিশেষজ্ঞদের মতে এই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা বলতে প্রধানত মানুষে মানুষে সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার প্রথাকে বোঝানো হয়।

এই নিয়মের পালনের নিমিত্তই বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের সরকারগুলি দেশ বা নির্দিষ্ট সংক্রমিত অঞ্চল জুড়ে জারি করে লকডাউন। তাছাড়া বিজ্ঞানীরা এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে বারবার বিশেষ ধরনের মাস্কের ব্যবহার এবং হাত পরিষ্কার রাখার উদ্দেশ্যে ৭০% আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল দ্বারা তৈরি স্যানিটাইজার তথা সাবান ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন।

এছাড়াও তারা জানিয়েছেন সংক্রমণ চলাকালীন বিশেষ প্রয়োজন এবং মাস্ক ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরোনো সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে। তা না হলে করোনাভাইরাস কে প্রতিরোধ করা আমাদের পক্ষে আদৌ সম্ভব হবে না।

 

করোনা ভাইরাস টিকাকরণ :

সমগ্র বিশ্বব্যাপী দীর্ঘ গবেষণার পর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন বা টিকা আবিষ্কারে সক্ষম হয়েছে। সর্বপ্রথম যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল দীর্ঘ গবেষণার পর করোনাভাইরাসের একটি টিকা আবিষ্কার করে তার ট্রায়াল শুরু করে। এর পরবর্তীতে প্রথমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া ও চীন নিজের স্বদেশে আবিষ্কৃত ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করে দেয়।

রাশিয়াতে সর্বপ্রথম এই ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের কন্যা। আমাদের উপমহাদেশও ভ্যাকসিন আবিষ্কার এবং তার প্রয়োগের ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকেনি। ভারতের দুটি সংস্থা: সিরাম ইনস্টিটিউট এবং ভারত বায়োটেক দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ভারতে তৈরি দুটি ভ্যাকসিন নিয়ে আসে।

করোনা ভাইরাস রচনা । Essay on Corona Virus । প্রতিবেদন রচনা
করোনা ভাইরাস রচনা । Essay on Corona Virus । প্রতিবেদন রচনা

 

এর একটির নাম হলো কোভিশিল্ড এবং অপরটি ভারত বায়োটেকের তৈরি কোভ্যাক্সিন। প্রথমে পরীক্ষামুলকভাবে এর প্রয়োগ শুরু হয় এবং ট্রায়ালের পর্যায় সফলভাবে শেষ হবার পর ধাপে ধাপে ব্যাপকহারে জনমানসে টিকাকরণ শুরু হয়ে যায়।

 

বিশ্বব্যাপী করোনার প্রভাব :

(i) প্রত্যক্ষ প্রভাব :

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ প্রভাব অত্যন্ত সুদূরপ্রসারি। প্রত্যক্ষ প্রভাব রূপে আমরা প্রতিদিন দেখতে পাচ্ছি আমাদের চোখের সামনে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হচ্ছেন। ঘন জনবসতি অঞ্চলে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি।

এই আক্রান্ত মানুষদের মধ্যে হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন তাদের প্রাণ বিসর্জন দিচ্ছেন। অন্যদিকে অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিতে চিকিৎসা তথা পরিকাঠামোগত দুরাবস্থা ক্রমশ আরও প্রকট হচ্ছে। এমনকি উন্নত দেশগুলিও বিপুল সংখ্যক রোগীদের পরিষেবা দানের ক্ষেত্রে যথেষ্ট ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খবর আসছে মানুষ মারা যাচ্ছেন বিনা চিকিৎসায় ।

(ii) পরোক্ষ প্রভাব :

এদিকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্ত লকডাউন এর ফলস্বরূপ ছোট মাঝারি বিভিন্ন ধরনের শিল্প অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়েছে। বৃহৎ শিল্প গুলিও মূলধনের অভাবে ধুঁকতে শুরু করেছে। এগুলির সাথে যুক্ত অসংখ্য মানুষের জীবিকাও পড়েছে প্রশ্নের মুখে। পৃথিবীজুড়ে বেকারত্ব অস্বাভাবিক রকমের বেড়ে যাচ্ছে। বিশ্ব অর্থনীতি পড়েছে সংকটের মুখে । স্বাভাবিকভাবেই সমাজের বুকে থাবা বসাচ্ছে দারিদ্র, অনাহার, খাদ্যাভাব ।

সমাজের বৈষম্যমূলক চিত্রটা দিন দিন আরো বেশি প্রকট হচ্ছে। এরই পাশাপাশি অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গিয়েছে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রীর কালোবাজারী । মাস্ক বা স্যানিটাইজারের মত প্রতিরোধমূলক উপকরণগুলো ছাড়াও অতি প্রয়োজনীয় টেস্টিং কিটের ক্ষেত্রেও শুরু হয়েছে দুর্নীতি ।

অনির্দিষ্টকালব্যাপী লকডাউন এর কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দৈনন্দিন সামগ্রী না পাওয়ার আশঙ্কায় মানুষের মধ্যে বাড়িতে পণ্য মজুত করে রাখার প্রবণতা অত্যন্ত বেড়ে গিয়েছে । সরাসরি যার সুযোগ নিয়েছে কালোবাজারি মজুতদারেরা। ফলতই নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যাওয়ার ঘটনাও চোখে পড়ছে ।

করোনা ভাইরাস রচনা । Essay on Corona Virus । প্রতিবেদন রচনা
করোনা ভাইরাস রচনা । Essay on Corona Virus । প্রতিবেদন রচনা

উপসংহার :

কথায় বলে, সভ্যতা যখন নিজের গতিকে অপ্রতিরোধ্য বলে মনে করে, সৃষ্টি তখন সমগ্র সভ্যতাকে ক্ষণিকের জন্য স্তব্ধ করে দেয়। একটি ক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক ভাইরাস যেন আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে এই প্রবাদ বাক্যের সত্যতাই প্রমাণ করে দিল। আবারো আমরা দেখতে পেলাম সৃষ্টির কাছে আমরা ঠিক কতখানি অসহায়।

তবে মানুষের এই অসহায়তায় প্রকৃতি বিশ্বজুড়ে দূষণকে কমিয়ে বায়ুকে আবারো বিশুদ্ধ করে তুলেছে ধীরে ধীরে। লকডাউনে শুনশান হাইওয়েতে বন্য নীলগাইয়ের চরে বেড়ানো এই দুর্যোগের পরিস্থিতিতেও আমাদের মুগ্ধ করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে করোনাভাইরাস পরবর্তী পৃথিবী আর আগের মতন থাকবে না। রাজনৈতিক তথা আর্থসামাজিক দিক থেকে এই বিশ্বে হয়তো আমূল পরিবর্তন ঘটে যাবে।

মানুষের জীবন যাপনের ক্ষেত্রেও হয়তো আসবে জন্য স্থায়ী পরিবর্তন। তবে একথা সত্যি যে এই দুর্যোগের মেঘ কাটিয়ে উঠে আমরা খুব তাড়াতাড়ি আবার সুস্থ পৃথিবীতে শ্বাস নিতে পারব। নতুন নিয়মের সেই পৃথিবীতে আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে সৃষ্টির সাথে তাল মিলিয়ে সভ্যতার যাপনেই জীবনের প্রকৃত সার্থকতা ।

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment