উক্তি পরিবর্তনের নিয়মাবলি | বাক্যতত্ত্ব | ভাষা ও শিক্ষা , ১. উপস্থাপিত বাক্যটি যদি বিবৃতিমূলক বাক্য হয়, দাহলে পরোক্ষ উক্তি নিম্নরূপে গঠিত হয় : উপস্থাপক অংশ + যে + উপস্থাপিত অংশ। যেমন প্রত্যক্ষ উক্তি : সে বলল, “আমি ভাল আছি ।”পরোক্ষ উক্তি : সে বলল যে, সে ভাল আছে। ২. প্রত্যক্ষ উক্তির উপস্থাপক কর্তার পুরুষ অনুযায়ী উপস্থাপিত অংশের সর্বনাম নিম্নরূপে পরিবর্তিত হয়।
উক্তি পরিবর্তনের নিয়মাবলি | বাক্যতত্ত্ব | ভাষা ও শিক্ষা
উদাহরণ ক. প্রত্যক্ষ : আমি বললাম, “আমি যাব না ৷ ” পরোক্ষ : আমি বললাম যে, আমি যাব না । খ. প্রত্যক্ষ : তুমি বললে, “আমাকে যেতে হবে।” পরোক্ষ : তুমি বললে যে তোমাকে যেতে হবে । উপস্থাপক ক্রিয়ার কর্মপদের পুরুষ অনুসারে উপস্থাপিত অংশের মধ্যম-পুরুষ পরিবর্তিত করতে হবে। যেমন ক. প্রত্যক্ষ : সে আমাকে বলল, “তুমি একটা বোকা । ” পরোক্ষ : সে আমাকে বলল যে, আমি একটা বোকা । ৪. প্রত্যক্ষ উক্তির সর্বনাম ও কালসূচক শব্দকে পরোক্ষ উক্তিতে নিম্নরূপে পরিবর্তিত করতে হয়। যেমন প্রত্যক্ষ পরোক্ষ প্রত্যক্ষ পরোক্ষ এই সেই এটা ইহা তাহা / উহা সে জীৱাই লাভ বা ওটা।
সেটা এমন অমন, তেমন এখানে আজ সেখানে ওখানে সেদিন আগামীকাল পরদিন গতকাল গতকল্য পূর্বদিন এখন তখন ৫. প্রত্যক্ষ উক্তির উপস্থাপিত অংশের ক্রিয়াপদও কখনও কখনও অর্থসঙ্গতির জন্য পরোক্ষ উক্তিতে পরিবর্তিত হয়। যেমন : প্রত্যক্ষ : রহিম বলল, “করিম, আমি তোমার কাছে আসছি।” পরোক্ষ : রহিম করিমকে ডেকে বলল যে সে তার কাছে যাচ্ছে। ৬. আশ্রিত খণ্ডবাক্যের ক্রিয়ার কাল পরোক্ষ উক্তিতে সব সময় মূল বাক্যাংশের ক্রিয়ার কালের ওপর নির্ভর করে না। যেমন- ক. প্রত্যক্ষ : ছেলে লিখেছিল, “শহরে খুব গরম পড়েছে।”
পরোক্ষ : ছেলে লিখেছিল যে, শহরে খুব গরম পড়েছিল। অথবা, ছেলে লিখেছিল শহরে খুব গরম পড়েছে খ. প্রত্যক্ষ : করিম বলেছিল, “আমি বাজারে যাচ্ছি। ” পরোক্ষ : করিম বলেছিল যে, সে বাজারে যাচ্ছে গ. প্রত্যক্ষ : মনসুর বলল, “আমি ঢাকা যাব।” পরোক্ষ : মনসুর বলল যে, সে ঢাকা যাবে । প্রত্যক্ষ উক্তিতে কোনো চিরন্তন সত্যের উদ্ধৃতি থাকলে পরোক্ষ উক্তিতে কালের কোনো পরিবর্তন হয় না। যেমন— ক. প্রত্যক্ষ : শিক্ষক বললেন, “পৃথিবী গোলাকার । ” পরোক্ষ : শিক্ষক বললেন যে, পৃথিবী গোলাকার।
খ. প্রত্যক্ষ : বৈজ্ঞানিক বললেন, “চুম্বক লোহাকে আকর্ষণ করে। ” পরোক্ষ : বৈজ্ঞানিক বললেন যে, চুম্বক লোহাকে আকর্ষণ করে। ৭. প্রত্যক্ষ উক্তির উপস্থাপিত বাক্য প্রশ্নবোধক হলে, পরোক্ষ উক্তিতে ‘জিজ্ঞাসা করা’, ‘জানতে চাওয়া”, ‘খোঁজ নেয়া’ ইত্যাদি ব্যবহৃত হয় এবং খণ্ড বাক্যের ক্রিয়াকে ভাব অনুসারে পরিবর্তন করতে হয়।
যেমন : ক. প্রত্যক্ষ : সে আমাকে বলল, “তোমার নাম কী ? ” পরোক্ষ : সে আমার কাছে আমার নাম জানতে চাইল । খ. প্রত্যক্ষ : শিক্ষক বললেন, “তোমরা কি ছুটি চাও?” পরোক্ষ : আমাদের ছুটি চাই কি না, শিক্ষক তা জিজ্ঞাসা করলেন। গ. প্রত্যক্ষ : বাবা বললেন, “কবে পর্যন্ত তোমাদের ফল বের হবে?” পরোক্ষ : আমাদের ফল কবে পর্যন্ত বের হবে, বাবা তা জানতে চাইলেন । ৮. অনুজ্ঞাসূচক বাক্য যদি প্রত্যক্ষ উক্তির উপস্থাপিত অংশ হয়, তাহলে, পরোক্ষ উক্তিতে নিম্নলিখিত ক্রিয়াপদগুলো ব্যবহৃত হয়। যেমন : আদেশ করা / অনুরোধ করা / প্রার্থনা করা / বলা। অতপর খণ্ড বাক্যের ক্রিয়াকে ভাব অনুসারে পরিবর্তন করতে হয়। যেমন : ক. প্রত্যক্ষ : শিক্ষক তাকে বললেন, “চুপ কর।” পরোক্ষ : শিক্ষক তাকে চুপ করতে আদেশ করলেন।
খ. প্রত্যক্ষ : হামিদ বলল, “তোমরা আগামীকাল এস।” পরোক্ষ : হামিদ তাদের পর দিন আসতে (বা যেতে) বলল। গ. পত্যক্ষ : তিনি বললেন, “দয়া করে ভেতরে আসুন।” পরোক্ষ : তিনি (আমাকে) ভেতরে যেতে অনুরোধ করলেন । ৯. আবেগসূচক প্রত্যক্ষ উক্তিকে পরোক্ষ উক্তিতে পরিবর্তিত করার সময় নিম্নলিখিত বাক্যাংশগুলো ব্যবহার করতে হয়। যেমন : আনন্দের সাথে / আক্ষেপের সাথে । দুঃখের সাথে / বিরক্তিভরে ।
বিস্ময়ের সাথে + বলল । বললেন। বললাম + যে। অতপর খণ্ড বাক্যের ক্রিয়াকে ভাব অনুসারে পরিবর্তন করতে হয়। যেমন : ক. প্রত্যক্ষ : সে বলল, “বাহ! কী সুন্দর পাখিটা।” পরোক্ষ : সে বিস্ময়ের সাথে / আনন্দের সাথে বলল যে, পাখিটা খুব সুন্দর। খ. পত্যক্ষ : লোকটি বলল, “বাঃ! । পাখিটি তো চমৎকার।” পরোক্ষ : লোকটি আনন্দের সাথে বলল যে, পাখিটি চমৎকার। গ. পত্যক্ষ : ভিখারিণী দুঃখের সাথে বলল, “শীতে আমরা কতই না কষ্ট পাচ্ছি।” পরোক্ষ : ভিখারিণী দুঃখের সাথে বলল যে, তারা শীতে বড়ই কষ্ট পাচ্ছে।
১০. প্রশ্নসূচক এবং অনুজ্ঞাসূচক বাক্যে ১নং নিয়মের “যে” ব্যবহৃত হয় না। ১১. প্রত্যক্ষ উক্তির সম্বোধন পদের জন্য পরোক্ষ উক্তিতে “সম্বোধন করে বলল যে, বা ‘হিসেবে সম্বোধন করে বললেন / জানতে চাইলেন” ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। ডা প্রত্যক্ষ থেকে পরোক্ষ উক্তিতে যেতে হলে প্রয়োজনীয় এ তাছাড়া যেতে হলে প্রয়োজনীয় এমন সব শব্দ ব্যবহার করতে হবে যা হয়তো সংলাপে নেই। ‘তুমিই শেষে এমন কথা বললে?” এই প্রত্যক্ষ উক্তির পরোক্ষ রূপ এরকম হতে পারে— ‘শ্রোতা আহত বিস্ময়ে বক্তা কীভাবে ওকথা বলতে পারল সেই প্রশ্ন করল।
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ বলেছেন যে, প্রত্যক্ষ উক্তি থেকে পরোক্ষ উক্তিতে পরিবর্তন করলে যদি দুই প্রকার অর্থ বোঝায়, তা হলে যাতে ঠিক অর্থ বোঝাতে পারা যায়, সেজন্য বন্ধনীর মধ্যে তা বুঝিয়ে দিতে হবে। যথা— নুরু বললেন যে তিনি (নুরু) ভাত খান নি। ৩ একজন একাধিক বাক্য বললে প্রত্যেকটি বাক্যের অর্থগত ভেদ দেখে জ্ঞাপক ক্রিয়ার প্রয়োগ করতে হবে। ঘোষণা বা বর্ণনাত্মক বাক্যের জন্য জ্ঞাপকক্রিয়া ‘বললেন’ বা তদর্থক ক্রিয়া, প্রশ্নাত্মক বাক্য হলে তার জন্য ‘প্রশ্ন করলেন ‘জিজ্ঞাসা করলেন’ বা তদর্থক ক্রিয়া, অনুজ্ঞাবাক্য থাকলে তার জন্য ‘আদেশ করলেন’, ‘অনুরোধ করলেন’ ইত্যাদি জ্ঞাপকক্রিয়া, বিস্ময়সূচক বাক্য থাকলে ‘আনন্দ, দুঃখাদি প্রকাশ করে বললেন’ এই ধরনের জ্ঞাপক ক্রিয়া ব ব্যবহার করতে হবে।
আরও দেখুন :
- উক্তির সংজ্ঞার্থ ও প্রকারভেদ | উক্তি পরিবর্তন | বাক্যতত্ত্ব | ভাষা ও শিক্ষা
- ধ্বন্যাত্মক শব্দ | শব্দদ্বিত্ব | ভাষা ও শিক্ষা
- উক্তি কী ও কেন | বাক্যতত্ত্ব | ভাষা ও শিক্ষা
- শব্দদ্বিত্ব ও শব্দদ্বিত্বের সাহায্যে শব্দগঠন | প্রতিধ্বনিমূলক শব্দদ্বিত্ব | পুনরাবৃত্তিমূলক শব্দদ্বিত্ব | শব্দদ্বিত্ব | ভাষা ও শিক্ষা
- তোমাদের দান তোমাদের বাণী | Tomader dan tomader bani | গুল বাগিচা | নজরুল সঙ্গীত | কাজী নজরুল ইসলাম