আন্তর্জাতিক নারী দিবস, নারী দিবস প্রতিবেদন রচনা। Essay on International women’s day

আন্তর্জাতিক নারী দিবস, নারী দিবস  [ Essay on International women’s day ] অথবা, বিশ্ব নারী দিবস – নিয়ে একটি প্রতিবেদন রচনার নমুনা দেয়া হল।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস রচনা । Essay on International women's day
আন্তর্জাতিক নারী দিবস রচনা । Essay on International women’s day

আন্তর্জাতিক নারী দিবস রচনার ভূমিকা:

ইতিহাস এগিয়ে চলেছে প্রকৃতি ও মানুষের সম্পর্কের বিবর্তনের মধ্য দিয়ে। এভাবে যতবার ইতিহাসের পট বদলেছে, উৎপাদন সম্পর্ক পাল্টেছে সব ক্ষেত্রেই নারীর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে বিশ্বের মােট জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী।

অর্ধেক জনশক্তি হিসেবে তাই নারীরা পূর্ণ অধিকারের দাবিদার । কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নারীরা বিভিন্ন অধিকার থেকে বঞ্চিত। তাই নারীর পূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯১৪ সাল থেকে ৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালে এ দিনটিকে স্বীকৃতি দেয়।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের পটভূমি ও রূপরেখা:

১৯১৪ সাল থেকে ৮ই মার্চ আন্ত-র্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয় আসছে। কিন্তু এর পটভূমি রচিত হয়েছিল আরও আগে, ১৮৫৭ সালে। সে বছর ৮ই মার্চ আমেরিকার পােশাক তৈরির একটি কারখানার নারী শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধি, কাজের উন্নত পরিবেশ, ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার এবং দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে।

তৎকালীন শাসক-শােষকরা এ সংগ্রাম স্তন্ধ করার জন্য নারী শ্রমিকদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালায়। এ দমন-পীড়ন উপেক্ষা করেও শ্রমিকরা আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে এবং ১৮৬০ সালে গড়ে তােলে ট্রেড ইউনিয়ন। ১৮৮৯ সালে আন্তর্জাতিক নারী আন্দোলনের অন্যতম দিশারি জার্মানির ক্লারা জেটকিন আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী সম্মেলনে নারীসমাজের অধিকারের বিষয়টি উত্থাপন করেন।

নানামুখী আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯০৮ সালের ৮ই মার্চ নিউইয়র্কের দরজি শ্রমিকরা নারীর ভােটদানের অধিকারের দাবিতে আন্দোলন করে। বিভিন্ন সংগঠনের সমর্থন পাবার ফলে এ আন্দোলন আরও জোরালাে হয় এবং ১৯১০ সাল থেকে নারীর ভােটাধিকার স্বীকৃত হয় । ৮ই মার্চ আন্ত-র্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্তও গৃহীত হয় ১৯১০ সালে ক্লারা জেটকিনের প্রস্তাব অনুযায়ী।

সে বছর ২৭-এ আগস্ট কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। এ সম্মেলনে ১৭টি দেশের ১০০ জনেরও বেশি নারী প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। ক্লারা জেটকিনের প্রস্তাবকে সকলেই সমর্থন জানান। ১৮৫৭ ও ১৯০৮ সালের ৮ই মার্চ সংগ্রামের সূচনার দিন হওয়ায় এ দিনটিকেই বেছে নেয়া হয়। পরবর্তীকালে ১৯১৪ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৮ই মার্চ আন্ত-র্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ১৯৬০ সালে পালিত হয় নারী দিবসের সুবর্ণ জয়ন্তী । আন্ত-র্জাতিক নারী দিবস জাতিসংঘের স্বীকৃতি পায় ১৯৭৫ সালে ।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের তাৎপর্য:

বিশ্বের প্রতিটি দেশে সংগ্রামী নারীদের কাছে আন্ত-র্জাতিক নারী দিবস তাদের নিজস্ব দাবি প্রতিষ্ঠার দিবস হিসেবে স্বীকৃত। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নারী-পুরুষ বৈষম্য দূরীকরণসহ ন্যায্য অধিকার আদায়ে ভিন্ন ভিন্ন মতাবলম্বী নারী সংগঠনগুলােও একমত। আর এ ঐকমত্যের প্রেরণার উৎস ৮ই মার্চ আন্ত-র্জাতিক নারী দিবস। দীর্ঘ প্রায় দশ দশক ধরে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের অধিকার সচেতন সংগ্রামী নারীসমাজ এ দিনটিকে নিজেদের অধিকার রক্ষার দিন হিসেবে পালন করে আসছে।

স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম আন্ত-র্জাতিক নারী দিবস পালিত হয় ১৯৭৩ সালের ৮ই মার্চ। নারীর অধিকার ও নারী উন্নয়নের ব্যাপারটির সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রয়েছে মানবজাতির কল্যাণ । কেননা অর্ধেক জনশক্তি হিসেবে বিশ্বের দক্ষতা, প্রতিভা অর্থাৎ মেধার অর্ধেক ভাণ্ডার সতি রয়েছে নারীর কাছে। নারী ও পুরুষের সমান অধিকার ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া সার্বিক অগ্রগতি সম্ভব নয় – এ সত্যটি আন্ত-র্জাতিক নারী দিবসের মর্মবাণী । তাই নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসনে জাতীয় জাগরণের ক্ষেত্রে আন্ত-র্জাতিক নারী দিবস বিশেষ তাৎপর্যবহ।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস রচনা । Essay on International women's day
আন্তর্জাতিক নারী দিবস রচনা । Essay on International women’s day

আন্তর্জাতিক নারী দিবস ও বাংলাদেশে নারীর অবস্থান:

বাংলাদেশে মােট জনসংখ্যার ৪৯ ভাগ নারী। সে দিক থেকে নারীরা দেশের অর্ধেক মানবসম্পদ অর্থাৎ অর্ধেক শ্রমশক্তির প্রতিনিধি। কিন্তু প্রচলিত সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুশাসনে নারীরা শিক্ষা, কর্মসংস্থান, উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণসহ নানারকম সুযােগ থেকে বঞ্চিত। নারীর মৃত্যুহারও পুরুষের তুলনায় বেশি। অল্প বয়সে বিয়ে, সন্তানধারণ এবং অপুষ্টিজনিত কারণে বাংলাদেশে বহু নারী অকালে মারা যায়।

এছাড়া আত্মহত্যা, খুন, বিষক্রিয়া, পানিতে ডােবা, আগুনে পােড়া ইত্যাদি কারণেও নারী মৃত্যুহার কম নয়। অন্যদিকে, যৌতুকের কারণে এবং অ্যাসিড নিক্ষেপ ও শারীরিকভাবে নারী নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনাও অহরহ ঘটছে। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, প্রচলিত সমাজ নারীকে মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য সুস্থ ও অনুকূল পরিবেশ দিতে পারেনি।

আন্ত-র্জাতিক নারী দিবস তাই আমাদের দেশে সতী-সেমিনারের মধ্যেই কিছুটা সীমাবদ্ধ।তবে আশার কথা হলাে, সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। জীবিকার প্রয়ােজনে বিপুল সংখ্যক নারী বাইরে কর্মক্ষেত্রে অংশ নিচ্ছে। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি সেক্টর তৈরি পােশাক শিল্পে কাজ করছে বিপুল সংখ্যক নারী শ্রমিক।

তবে প্রশাসনে, শিক্ষাক্ষেত্রে, চিকিৎসা সেবায়, রপ্তানিতে নারীর অংশগ্রহণ পুরুষের তুলনায় অনেক কম। প্রচলিত রীতিনীতি ও পুরুষতান্ত্রিক সমাজের আধিপত্যে নারী এখনও অসাম্যের সম্মুখীন। জাতীয় সম্পদে নারীর অসম অধিকার, পারিবারিক আইনে নারীর অসম অধিকার, বাবার সম্পত্তিতে ছেলে ও মেয়ের অসম অধিকার প্রতিনিয়ত নারীকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে। অর্থাৎ মানুষ হিসেবে এখনও নারীর স্বীকৃতি মেলেনি।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস রচনা । Essay on International women's day
আন্তর্জাতিক নারী দিবস রচনা । Essay on International women’s day

উপসংহার:

সভ্যতার গােড়াপত্তন ও তার ক্রমবিকাশে নারীর ভূমিকা পুরুষের চেয়ে কম নয়। কিন্তু প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারী পুরুষের সমান অধিকার থেকে বঞ্চিত। আন্ত-র্জাতিক নারী দিবসের মূল লক্ষ্যই হলাে নারীর ন্যায্য অর্থাৎ সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সমাজের অগ্রগতি সাধন । তাই নারী ও পুরুষ সমান মর্যাদা ও অধিকার পেলেই আন্তর্জাতিক নারী দিবস যথাযথ মর্যাদা পাবে, অর্জিত হবে নারী দিবসের লক্ষ্য।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment