অক্ষরবৃত্ত নামকরণটি কি বিজ্ঞানসম্মত নয়? – বিষয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “ভাষা ও শিক্ষা” বিষয়ের “ছন্দ ও অলঙ্কার” বিভাগের একটি পাঠ।
অক্ষরবৃত্ত নামকরণটি কি বিজ্ঞানসম্মত নয়?
অক্ষরবৃত্ত নামকরণটি বিজ্ঞানসম্মত নয় এবং অক্ষরের সংখ্যা গণনা দ্বারা ছন্দের ধ্বনিমাত্রা গণনাও অবৈজ্ঞানিক — এরূপ একটি ধারণা বহুল প্রচলিত। কিন্তু এ ধরনের ছন্দের মাত্রাগণনা কি সত্যই অবৈজ্ঞানিক?
প্রাচীন বাংলা সাহিত্যে অক্ষর গোনা ছাড়া ছন্দোনিরূপণের অপর কোনো ব্যবস্থাই তো ছিল না। তাহলে প্রাচীন বাংলা সাহিত্যে সমস্ত ছন্দই কি ভুল হিসেব করা হতো? সংস্কৃত ছন্দঃশাস্ত্রেও বলা হয়েছে ‘বৃত্তম্ অক্ষরসংখ্যাতম্’- অর্থাৎ অক্ষরের ‘সংখ্যা দ্বারা বৃত্তছন্দ নিরূপিত হয়।— তাহলে সংস্কৃত বৃত্ত ছন্দও কি অবৈজ্ঞানিক?- আসলে ‘অক্ষর’ শব্দটির অর্থনিরূপণে বিভ্রান্তি ঘটাতেই এ বিপত্তি। ভারতীয় ভাষাবিজ্ঞানে অক্ষর বলতে যুক্ত-অযুক্ত বর্ণ বা বর্ণসমষ্টিই অক্ষররূপে গ্রাহ্য- এ সত্যটি ভুলে গেলেই বিপদ।
অবশ্য আধুনিককালে দেশি-বিদেশি-তদ্ভব শব্দের প্রতিবর্ণীকরণে প্রাচীন বর্ণবিন্যাস সর্বত্র কার্যকর নয় বলেই মাঝে মাঝে বিভ্রাট ঘটে থাকে। প্রাগাধুনিক বাংলায় ব্যবহৃত সর্বপ্রকার যুক্তধ্বনির জন্যই যুক্তাক্ষরের ব্যবস্থা ছিল, একটি মাত্র ব্যতিক্রম— ৎ (খণ্ড‘ত’), এটা বিচ্ছিন্ন অক্ষর, তাই ছন্দেও তখন শুধু এর জন্যই এক মাত্রা বিহিত হয়েছে, আবার কখনো পরবর্তী ব্যঞ্জন ধ্বনির সঙ্গে যুক্ত হয়ে একমাত্রা লাভ করেছে।
বস্তুত বাংলা তিন জাতীয় ছন্দেই ব্যতিক্রম যথেষ্ট রয়েছে— নির্দোষ পঠনভঙ্গির ওপরই এদের যথাযথ মাত্রামান নির্ভর করে। অতএব অক্ষর গুনে মাত্রা নিরূপণ করতে গেলেও অনুরূপ অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে। অক্ষরসংখ্যা গুনে সংস্কৃতে যে বৃত্তছন্দের সৃষ্টি হয়েছিল, তার ঐতিহ্যবাহী বাংলা তদ্ভব ছন্দকে ‘অক্ষরবৃত্ত’ আখ্যাদান অবশ্যই সার্থক।

অক্ষরবৃত্ত নামটি প্রবোধচন্দ্র কর্তৃক উদ্ভাবিত কিংবা প্রচারিত হলেও পরবর্তীকালে তিনি বহুবার এর নাম পরিবর্তন করেছেন, যথা— যৌগিক, বিশিষ্ট কলামাত্রিক, অর্ধকলাবৃত্ত, মিশ্রকলাবৃত্ত এবং সর্বশেষ নাম মিশ্রবৃত্ত।
আরও দেখুন: